পরিবেশের জন্য ভাবনা – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. কোনাে স্থানের বায়ুর উয়তার তারতম্যের কারণ হিসাবে উচ্চতার প্রভাব ব্যাখ্যা করাে।
Answer : সূর্য থেকে আগত তাপ বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে সরাসরি পৃথিবীকে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। প্রথমে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর পরিচলন পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়, ভূপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরে ওঠা যায়, ততই বায়ুর উন্নতা ক্রমশ কমতে থাকে। প্রতি কিকি উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য বায়ুর উয়তা প্রায় 6.5°C হারে কমে। তাই 3048 মিটার ওপরে বায়ুর উয়তা প্রায় 0°Cহয়। এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ প্রভৃতি পর্বতশৃঙ্গে উন্নতা 0°C এর কম হয়। উয়তা কমতে কমতে ট্রোপােস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ অংশে এসে -56° হয়। স্ট্রাটোস্ফিয়ারে উয়তা প্রায় স্থির থাকে। আয়নােস্ফিয়ারে উয়ত ক্রমশ বেড়ে প্রায় 2000°C হয়।
2. গ্রিনহাউস গ্যাস ও গ্লোবালওয়ার্মিং-এর সম্পর্ক লেখাে।
Answer : বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত যে সকল গ্যাস দীর্ঘতরঙ্গ যুক্ত অবলােহিত আলাে শােষণ করে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটায়, তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়। যেমন–CO2, CH4, CFC ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর গড় উয়তা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাচ্ছে যাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলা হয়। অর্থাৎ গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণ।
3. জ্বালানির তাপমূল্য বলতে কী বােঝাে? LPG-এর তাপমূল্য কত ?
Answer : একক ভর বিশিষ্ট কোনাে জ্বালানির সম্পূর্ণ দহনে যে পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, তাকে ওই জ্বালানির তপনমূল্য বলে।
LPG-এর তাপনমূল্য হল – 50 KJ/g।
4. বিশ্ব উয়ায়ন নিয়ন্ত্রণের দুটি উপায় লেখাে।
Answer : (1) কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে অপ্রচলিত শক্তির উৎসের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
(i) CFC-এর ব্যবহার কমাতে হবে।
(ii) বিশ্ব উন্নয়ন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
পরিবেশের জন্য ভাবনা – দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তাগুলি উল্লেখ করাে।
Answer : জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণ করা বিশেষ প্রয়ােজন, কারণ—
(i) জীবাশ্ম জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এর ভাণ্ডার ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। | জীবাশ্ম জ্বালানি তৈরি হতে ভূ-গর্ভে কোটি কোটি বছর সময় লাগে তাই যথেচ্ছভাবে। ব্যবহার করলে অদূরভবিষ্যতে পৃথিবীর সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানি (যেমন—কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি) নিঃশেষিত হবে। যেহেতু মানব সভ্যতার উন্নয়নের প্রতিটি পদক্ষেপ এই শক্তি উৎস ব্যতিরেকে সম্ভব নয়, তাই জীবাশ্ম জ্বালানির সংরক্ষণ অতি প্রয়ােজন।
(ii) জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার কমালে তার দহনে উৎপন্নCO2 গ্যাসের পরিমাণও বাতাসে কম হবে ফলে বায়ুদূষণ কম ঘটবে।
(iii) জীবাশ্ম জ্বালানির উৎসগুলি পুনর্নবীকরণযােগ্য নয়।
(iv) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ হ্রাস পাবে, ফলে বিশ্বউন্নয়নের মাত্রা কমবে।
2. সৌরশক্তি ব্যবহারের সুবিধা কী কী?
Answer : সৌরশক্তি ব্যবহারের সুবিধাগুলি নিম্নরূপ-
(i) সৌরশক্তি প্রবহমান ও অফুরন্ত, নিঃশেষ হবার সম্ভাবনা নেই, তাই ইচ্ছেমতাে ব্যবহার করা যেতে পারে। বৈজ্ঞানিকদের মতে পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা সৌরশক্তির সাহায্যে পূরণ করা সম্ভব হবে।
(ii) সৌরশক্তি ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় না। জীবাশ্ম জ্বালানিগুলি থেকে শক্তি উৎপাদনের সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনাে অক্সাইড ইত্যাদি নির্গত হয় যা বিশ্বব্যাপী উয়ায়নের মূল কারণ। তাই সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবেশের সংরক্ষণ ও ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হবে।
(iii) সৌরপ্যানেল ও ব্যাটারির সাহায্যে অতি সাধারণ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, ফলে ব্যবহার করতে সুবিধা হয়।
(iv) প্রত্যন্ত পাহাড়ি বা দুর্গম অঞলে, কম মূলধনে ঝুঁকিহীনভাবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
3. বায়ােফুয়েল কয় প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকারের উদাহরণ ও ব্যবহার উল্লেখ করাে।
Answer : বায়ােমাস থেকে উৎপন্ন জ্বালানিকে বায়ােফুয়েল বলা হয়। বায়ােফুয়েল তিন প্রকার, যথা-(i) কঠিন বায়ােফুয়েল, (ii) তরল বায়ােফুয়েল এবং (iii) গ্যাসীয় বায়ােফুয়েল।
(i) কঠিন বায়ােফুয়েল : কাঠ, বাঁশ, খড়, গৃহস্থালির আবর্জনা প্রভৃতি কঠিন। বায়ােফুয়েলের উদাহরণ। এগুলি মূলত গ্রামীণ এলাকায় রান্নার কাজে জ্বালানি। হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
(ii) তরল বায়ােফুয়েল : বায়ােইথানল (ভুট্টা ও আখের ছিবড়ার সন্ধান প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন) বায়ােডিজেল (উদ্ভিজ্জ তেল ও ফ্যাটের ট্রান্স-এস্টারিফিকেশনে উৎপন্ন) প্রভৃতি তরল বায়ােফুয়েলের উদাহরণ। বায়ােইথানল সরাসরি গাড়ির জ্বালানিরূপে
(iii) গ্যাসীয় বায়ােফুয়েল : গােবর গ্যাস গ্যাসীয় বায়ােফুয়েলের উদাহরণ। এটি মূলত জ্বালানিরূপে ও আলাে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। বায়ােগ্যাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
4. ভূতাপশক্তি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি উল্লেখ করাে।
Answer : ভূ-তাপশক্তি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি নিম্নরূপ-
সুবিধা অসুবিধা
(i) ভূ-তাপশক্তির জোগান অফুরন্ত। (i) ভূ-তাপশক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
(ii) এই শক্তির জোগান অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন অর্থাৎ এই শক্তি 24 ঘন্টা ধরে সরবরাহ করা সম্ভব। (ii) ভূগর্ভ থেকে উয়জলের সঙ্গে বিভিন্ রাসায়নিক পদার্থ ভূপৃষ্ঠে চলে আসে,যা প্রযুক্তি, নিরন্তর গবেষণা দরকার, তা বেশিরভাগ দেশেই সহজলভ্য নয়।
(iii) এই শক্তি সরাসরি ব্যবহার করলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি পরিবেশে মুক্ত হয় না বলে পরিবেশ দূষিত হয় না। (iii) উৎপাদন ক্ষমতা কম বলে সীমিত ক্ষেত্রে ব্যবহারযােগ্য।

মন্তব্যসমূহ